আদর্শ পুত্রবধূ (Ideal daughter-in-law)

 

আদর্শ বধূ (Ideal daughter-in-law)

আদর্শ পুত্রবধূ (Ideal daughter-in-law)

اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفى وَسَلَامٌ عَلى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفى  أَمَّا بَعْدُ: فَأَعُوْذُ بِالله مِنَ الشَّيْطٰنِ الرَّجِيْمِ* بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ * ﴿وَأُمُّهٗ صِدِّيْقَةٌ ط﴾ (المائدة:٧٥)

سُبْحٰنَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ* وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ*

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ


বউ শাশুড়ির সম্পর্ক, দু’জন নারীর সম্পর্ক। তাই এ বিষয়ে কথা বলা বেশ কঠিন। শরিয়ত যাদের ব্যাপারে বলেছে– স্বল্প বুদ্ধির অধিকারী। এ কথার উদ্দেশ্য এটা নয় যে তারা নির্বোধ। তাদের মধ্যে অনেক মেধাবী এবং বুদ্ধিমতীও রয়েছে। লেখাপড়ায় তারা যথেষ্ট অগ্রসর। দুনিয়ার বড় বড় ডিগ্রিও অর্জন করছে। তবে তাদের আবেগ বেশি। আবেগ সর্বদা তাদের বুদ্ধিকে কাবু করে রাখে। আবেগের কাছে দ্রুত পরাজিত হয়ে যায়। তাই বুদ্ধির ক্ষেত্রে শরিয়ত তাদেরকে অসম্পূর্ণ বলেছে। বুদ্ধির ক্ষেত্রে দু’জনই যেহেতু অপরিপক্ব তাই তাদের মাঝে ঝামেলা একটু বেশি হওয়া স্বাভাবিক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে একজন নারীর গভীরতম ভালোবাসা কোনো নারীর সাথেই হয়। যে ভালোবাসা তার স্বামী, সন্তান, ভাই কিংবা অন‍্য কারো সাথে হয় না। তার অন্তর ভালোবাসা হয়ত তার বোন বা মায়ের হবে। কিংবা শিক্ষিকা বা সহপাঠীর সাথে হবে। তবে এটাও সত্য যে, কোনো নারী কাউকে ঘৃণা করলে কোনো নারীকেই করবে। স্বামী যখন স্ত্রীকে তালাক দেয় তখন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী স্বামীকে দোষারোপ তো করে। কিন্তু মন থেকে তাকে ঘৃণা করতে পারে না। অথচ সে তাকে মানসিকভাবে কষ্ট দিয়েছে। জীবনটা অগোছালো করে দিয়েছে। এতো কিছুর পরও স্বামীর প্রতি সে হৃদয়ে টান অনুভব করে। 

নিজের ঘরের কথাই বলি, আমার নাতনি হান্নানা। দাদির প্রতি তার এতো অনুরাগ ও ভালোবাসা! যা আমাদের বোধগম্যের বাইরে! শুধু ভাবি, ছোটরাও কি বড়দের সাথে এমন ভাব জমাতে পারে?


বৌ-শাশুড়ির মধ্যকার মতবিরোধ ও তার কারণ

বৌ-শাশুড়ির মধ্যে মতবিরোধ তৈরির অনেকগুলো কারণ রয়েছে।


১. অখণ্ড অধিকার খণ্ডিত হওয়া

বিয়ের পর তাদের কাজ ও অবস্থার মাঝে রদবদল হয়। এতদিন ছেলের উপর ছিলো তাঁর অখণ্ড অধিকার। ছেলে শুধু মায়ের অনুগত ছিল। তার উপর শুধু মায়ের হুকুমই চলত। এখানে অন্য কারো অধিকার ছিল না। হঠাৎ, তিনি দেখছেন, তাঁর পুত্রের জীবনে স্ত্রী পরিচয়ে অন্য এক নারীর প্রবেশ ঘটেছে! 

এতদিন ছেলে ছিল তাঁর একক অবলম্বন, সে এখন হতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন। এ বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতে পারছেন, না মেনে নিতে পারছেন।

বিয়ের পর স্ত্রী তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ছেলে তাকেও গুরুত্ব দেয়, ভালোবাসে। সময় সময় তার পরামর্শও গ্রহণ করে। তারা দু’জন পরস্পর মিল-মুহাব্বতের সাথে থাকে। এতে শাশুড়ি ভাবে ছেলেটা হয়তো আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অপরদিকে স্ত্রী ভাবে, আমাকে সে বিয়ে করেছে, এখন সে আমার স্বামী। শাশুড়ি কেন তাকে আগলে রাখবে? মূলত এখান থেকেই শুরু হয় মতবিরোধ।


২. সংসার কার কথায় চলবে?

Competing for the primary position in the family.

কার কথায় সংসার চলবে? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কারটা গৃহীত হবে? এ নিয়েও দ্বন্দ্ব চলে। বউর ইচ্ছা থাকে তার কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। আর শাশুড়ি বলে, ঘর-সংসার আমার ছেলের। সুতরাং এখানে আমার কথাই চলবে। এভাবেও ঝগড়া সৃষ্টি হয়।


৩. ছোটো ছোটো বিষয়ে হস্তক্ষেপ

শাশুড়ি কখনো কখনো ছোটোখাটো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। প্রতিটি বিষয়ে অন্যকে উপদেশ দেয়। মৌলিকভাবে এটা একটা ব্যাধি। প্রতিটি বিষয়ে পুত্রবধূকে উপদেশ দিতে থাকে। কখনো ভাবে না যে, এ উপদেশগুলো তার কাছে ভারী মনে হচ্ছে কিনা?  সে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে না তো? এসব কারণেও সম্পর্ক নষ্ট হয়।


৪. একে অন্যের থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা

কখনো একে অন্যের থেকে অতিরিক্ত প্রত‍্যাশা করে। যখন আশানুরূপ না হয় তখন উভয়ের মাঝে বিবাদ শুরু হয়।


৫. একক ভালবাসবা

স্ত্রী চায়, স্বামী তাকে এককভাবে ভালবাসবে। মায়ের ইচ্ছা, ছেলে বিয়ের আগে যেমন পুরাপুরি আমার ছিলো, এখনো থাকবে। এভাবে একজনের প্রতি অন্যজনের বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হতে থাকে। শ্বশুরবাড়ীর লোকজন এ ক্ষেত্রে অনেক সময় বাড়াবাড়ি করে। এটা ঠিক নয়। শরিয়তের একটি সীমারেখা রয়েছে। সেই সীমারেখা অনুসরণ করলে প্রত্যেকের জীবন-ই সুখী হবে। শ্বশুরবাড়ীর লোকদের স্মরণ রাখা উচিৎ, তাদের ছেলে যে মেয়েকে বিয়ে করেছে, সে কোনো একজন পিতার কন্যা। ছেলের সংসার গোছানোর জন্যই ভালো কোন পরিবার থেকে এসেছে। তারা যদি মেয়েটির যত্ন নেয় তাহলে সেও তাদেরকে সম্মান করবে। যাদের মধ্যে দ্বীনের বুঝ কম এমন অনেক পরিবার দেখেছি, দুই পরিবার দুইপক্ষ হয়ে দলাদলি শুরু করতে থাকে। কিসের বিয়ে-শাদি? এ যেন দুই প্রতিপক্ষের লড়াই। এটা অজ্ঞতা। এমনকি নাতি-পুতিরাও এই ঝগড়ায় অংশ নিয়ে থাকে। মা তার বাচ্চাকে বুঝায়, তুমি তোমার দাদির কাছে যাবে না। এটা করবে না। ওটা করবে না।


বিভিন্ন শ্রেণির পুত্রবধূ

একবার জরিপ করা হয়েছিলো যে, স্বভাবগত দিক থেকে পুত্রবধু কত ধরনের  হতে পারে? জরিপে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, স্বভাব-চরিত্রের দিক থেকে পুত্রবধূ ছয় ধরণেরঃ


১. শাশুড়িভক্ত বধূ

এ প্রকারের বধূকে বলা হয় শাশুড়িভক্ত। শাশুড়িকে খুশি রাখাই তার  জীবনের লক্ষ্য। তাই সে শাশুড়ির প্রতিটি কাজকে সমর্থন করে। ‘জী আম্মা’ বলেই জীবন পার করে। শাশুড়ির কাজে কখনো  বিরোধিতা করে না। 


২. বাধ‍্য হয়ে শাশুড়িকে খুশি রাখে

যাকে তার স্বামী বলে, ‘আমার মাকে তোমার খুশি রাখতে হবে’। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই সে শাশুড়িকে খুশি রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু মনে তার ক্ষোভ থাকে। শুধু স্বামীর কথায় শাশুড়িকে বাহ্যত খুশি রাখছে। যাতে ঘরের পরিবেশ ঠিক থাকে। বাস্তবে শাশুড়ির প্রতি তার প্রচণ্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ।


এ ব্যাপারে একটি গল্প আছে

চার মেয়ে। কোন এক টিচারের কাছে ভাষা শিখত। তাদের মধ্যে তিনজনই ছিলো অবিবাহিতা। কথা প্রসঙ্গে একদিন বিয়ের বিষয় আলোচনা উঠল। টিচার বললেন, 

"What will you do if you miss your mother in law?"

আচ্ছা, তুমি যদি তোমার শাশুড়িকে খুব মিস করো তাহলে কী করবে? 

অবিবাহিতা মেয়েদের থেকে

প্রথম মেয়ে: আমি তাকে আবেগময় একখানা পত্র পাঠাবো। তাকে জানাবো, আমি তাকে কতটা স্মরণ করছি।

দ্বিতীয় মেয়ে: আমি তাকে একটি চমৎকার কার্ড পাঠাবো। তাতে সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে দিবো– "Mother in law I miss u." (আম্মা! আপনাকে আমি খুব মিস করছি)

তৃতীয় মেয়ে: তার জন্য আমি একটি ফুলের তোড়া উপহার পাঠাবো। যার উপর লেখা থাকবে– "I miss you." (আমি আপনাকে খুব মিস করছি)

চতুর্থ মেয়ে: (যে ছিলো বিবাহিতা) তাকে যখন বলা হলো–"What will you do if you miss your mother in law?" 

সে বলল–

 "I will reload my gun and try again." 

(বন্দুকে গুলি ভরে আবার চেষ্টা করবো)


৩. বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন বধূ 

সে শাশুড়ির সাথে সদ্ব্যবহার করে চলে। তবে নিজের জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কেও সচেতন থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এধরণের বধূরাই সফল জীবন যাপন করে।


৪. Transformer

 "Transformer" শব্দটা অদ্ভুত মনে হলেও এ নামটাই তাদের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সে শাশুড়ির সব তিক্ত আচরণ নীরবে সহ্য করতে থাকে আর সুদিনের আশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। এক সময় তার সন্তানরা বড় হবে। ঘরের পজিশন মজবুত হবে। স্বামীর সঙ্গেও সম্পর্ক দৃঢ় হবে। নিজে পরিণত বয়সে পৌঁছবে। সন্তানরা তাকে সঙ্গ দিবে। স্বামীও তাকে দূরে ঠেলতে পারবে না। তখন সে ঘ্যানর ঘ্যানর করে শাশুড়ির থেকে অতীত জীবনের বদলা নিবে!


৫. শিক্ষার উপর যার গর্ব রয়েছে

নিজের শিক্ষার উপর তার বেশ গর্ব। স্বামীকে হাতের মুঠোয় রাখতে চায়। স্বামীকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখে। পরিবারের সাথে স্বামী সম্পর্ক রাখবে এটা সে চায় না।


৫. তাল মিল দিয়ে চলে

প্রথম দিকে সবার সাথেই তাল মিল দিয়ে চলে। কিন্তু যখন থেকে বুঝতে পারে, শাশুড়ি কম শিক্ষিত, তেমন চতুর নয়। তখন থেকে শাশুড়িকে ছোটোখাটো ব্যাপারে ভর্ৎসনা করতে থাকে। অবজ্ঞার সুরে কথা বলে। তর্ক করে এবং চেষ্টা করে যাতে ছেলের সাথে মায়ের সম্পর্ক কম থাকে। নাতিদের সাথে তো একদমই না। কখনো ছেলের সামনেই মায়ের সমালোচনা করে।


পুত্রবধূর জন্য কিছু নীতিমালা

প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে বৌ-শাশুড়ির মাঝে সম্পর্ক ভাল রাখার জন‍্য করণীয় কী?

আমরা এখানে কিছু মৌলিক বিষয় তুলে ধরব যেগুলো বাস্তব জীবনে অনেক কাজে লাগবে।


১. সর্বদা মন স্বচ্ছ রাখবে

মন সর্বদা স্বচ্ছ রাখবে। হিংসা-বিদ্বেষ, রাগ, অহংকার এগুলো মনে স্থান দিবে না। এগুলো মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার মন যত স্বচ্ছ সে তত ভালো। বৌ-শাশুড়ির মধ্যকার সম্পর্ক ভালো রাখতে হলে প্রথমে নিজের মন পরিষ্কার  রাখতে হবে। অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটে গেলেও তা ভুলে যাবে। নিজের মধ্যে অন্যকে ক্ষমা  করার গুণ অর্জন করবে।


২. ভুল বুঝাবুঝি হতে দিবে না

একজন আরেকজনকে ভুল বুঝা। এই ভুল বুঝাবুঝি খুব দ্রুত সম্পর্ক নষ্ট করে। অধিকাংশ মেয়ে এই ভুলটা করে থাকে। স্বামী যদি মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়, স্ত্রী পেরেশান হয়। আবার স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটু মিল-মহব্বত বেশি দেখা গেলে শাশুড়ি ভাবে না জানি ছেলেটা আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কোন বিষয়ে মনে খটকা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নিন। অহেতুক পেরেশান হওয়ার কী দরকার? ভুল বুঝাবুঝি থেকেই ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়। তারপর শুরু হয় শত্রুতা।


৩. অন্যের ভুল এড়িয়ে চলবে

সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য সর্বদা একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, কারো মধ্যে দোষ যেমন আছে তেমন গুণও আছে। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যার মধ্যে শুধু দোষই দোষ, ভালো কোনো গুণ তার মাঝে নেই। তাই বলা হয়– ‘‘দোষেগুণে মানুষ’’

বৌ-শাশুড়ি প্রত্যেকের মধ্যেই কোন না কোন ভালো গুণ অবশ্যই পাওয়া যাবে। আমরা যদি গুণগুলো সামনে রেখে ভুলগুলো এড়িয়ে চলি তাহলে যে কারো সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সহজ হবে।


নবীজী সা. বলেছেন–

কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিনা নারীর অবজ্ঞা না করে। তার একটি স্বভাব অপছন্দ হলে অপরটি অবশ্যই পছন্দ হবে। ভালো না লাগার মত অনেক দোষই হয়তো  স্ত্রীর মধ্যে আছে। তাই বলে ভালো লাগার মত কোন গুণ কি তার মধ্যে নেই? অবশ্যই আছে। মানুষ মানুষই, ফেরেশতা নয়! মানুষ হিসেবে কিছু দোষ তার মধ্যে থাকবেই। আপনি দোষগুলো এড়িয়ে চলুন আর গুণগুলো খুঁজে বের করুন। দেখবেন, তার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। আপনি সুখী হবেন। আল্লাহ তায়ালাও খুশি হবেন।


৪. মুখ ফসকে যেন বেরিয়ে না পড়ে

"Don't say unpleasant words with your tongue." অন্তরে যাই থাকুক; মুখ ফসকে যেন বেরিয়ে না পড়ে। মুখের সামান্য কথা বড় ধরণের বিবাদ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। সর্বদা সতর্ক থাকা চাই। কখনো এমন কথা যেন মুখে এসে না পড়ে যেটা শাশুড়ির কষ্টের কারণ হতে পারে।  

"Right words at the right time are like diamonds."

সঠিক সময়ে সঠিক কথা হীরকতুল্য’’ অর্থাৎ সঠিক সময়ে শব্দের সঠিক ব্যবহার কথার কার্যকারিতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।


৫. উপহারসামগ্রী আদান-প্রদান

সম্পর্ক মজবুত করার জন্য পরস্পর উপহারসামগ্রী আদান-প্রদান করা জরুরি। শাশুড়ি বৌকে উপহার দিবে। বউ শশুড়িকে উপহার দিবে। এতে ভালোবাসা ও সম্পর্ক মজবুত হতে থাকবে।


৬. ফোন করে শাশুড়ির খোঁজখবর নিবে

বউ দূরে কোথাও থাকলে নিয়মিত ফোন করে শাশুড়ির খোঁজখবর নিবে। প্রশ্ন হতে পারে, কতদিন পর পর ফোন করবো? সপ্তায় অন্তত একবার। এটা হলো সর্বনিম্ন। এতটুকু অবশ্যই করবে। প্রতিদিন ফোন করতে পারলে বেশি ভালো। ফোনালাপে সম্পর্ক মজবুত হয়।


৭. কথা বলার সময় চেহারা প্রফুল্ল রাখবে

শাশুড়ির সাথে কথা বলার সময় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবে। চেহারায় প্রফুল্ল ভাব রাখবে। এভাবে কথা বলার দ্বারা শাশুড়ির অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।


৮. শাশুড়িকে বুঝতে চেষ্টা করবে

শাশুড়িকে এভাবে বুঝতে চেষ্টা করবে। বিয়ের পর স্বামীর অধিকারে আমার জীবনে কারো অনুপ্রবেশ ঘটেনি। আমাকে কিছু হারাতে হয়নি। অধিকারও খণ্ডিত হয়নি। কিন্তু ছেলে বিয়ে করানোর পর শাশুড়ির অধিকারে অন্যের প্রবেশ ঘটেছে। তার অখন্ড অধিকার খণ্ডিত হয়েছে এ কথা ভেবে তার প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে।


৯. শাশুড়িকে মা হিসেবে বরণ করবে নিবে

শরিয়তের প্রতিটি বিষয়ই সুন্দর। হাজার নীতি কথাকে এক কথায় নিয়ে এসেছে। শরিয়ত আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, বিয়ের আগে তোমার মা-বাবা একজন ছিলো আর এখন দু’জন। শরিয়ত শাশুড়িকে মায়ের মর্যাদা দিয়েছে। কোন পুত্রবধূ যদি শাশুড়িকে মা হিসেবে বরণ করে নেয়। আর শাশুড়ি পুত্রবধূকে নিজের কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। তাহলে কোনো ঝগড়া থাকে না। অনেক সময় দেখা যায়, নিজের মেয়ের জন্য এক নীতি অবলম্বন করে আর পুত্রবধূর জন্য ভিন্ন নীতি অবলম্বন করে। জীবনের তিক্ততা এভাবেই শুরু হয়।


১০. শাশুড়ি কথা নির্দ্বিধায় মানবে

শাশুড়ি কোন কিছু বললে নির্দ্বিধায়  মেনে নেবে। রেগে যাওয়া উচিৎ নয়। সে তো ভালো মনে করেই বলছে। এতে পুত্রবধূর জন্য অনেক ফায়দা রয়েছে। এর দ্বারা তার স্বভাবের উন্নতি ঘটতে থাকবে। অলসতা দূর হবে। সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। যারা অল্পতে বেঁকে যায়, অস্থির হয়ে পড়ে। আজীবন তারা বাঁকাই থাকে। তাদের জীবন কখনো শুদ্ধ হয় না।


একটি দোকানে মার্বেলের একটি ভাস্কর্য ছিলো। দর্শকরা এসে তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত, কখনো ছুঁয়ে দেখত। তার পাশেই ছিলো কিছু টাইলস। সে ভেবে পেরেশান হতো, ব্যাপার কি? লোকজন এসে শুধু মারবেলের ভাস্কর্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। একদিন সে মারবেলকে বলল, আচ্ছা ভাই, বলো তো তোমার মধ্যে এমন কী গুণ আছে? যার কারণে মানুষ তোমার প্রতি এতো আকৃষ্ট হয়? তোমাকে দেখে মুচকি হাসে? পাশে এসে দাঁড়ায়? আমি তো এখানেই থাকি। কই! কেউ তো আমাকে ফিরে দেখে না? 

মারবেল বললো, আসলে আমার উপর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কারিগররা যখন আমাকে কাঁটাছেঁড়া করেছে তখন নিজেকে আমি তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। তারা ইচ্ছে মত আমার উপর অস্ত্র চালিয়েছে। কোন প্রতিবাদ করিনি। আমি  যেহেতু নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে  দিয়েছি। তাই এখন আমাকে দেখতে মানুষ ভিড় জমায়। তুমি বড় শক্ত। এভাবে নিজেকে কখনো মিটাতে পারনি। তাই তোমার মূল্য আমার মত হয়নি।

ঠিক তেমনিভাবে যে বউ মার্বেলের মত এভাবে নিজেকে সঁপে দিতে পারে তার ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। আর যে বধূ টাইলসের মত শক্ত হয়ে থাকে। সে কিছুদিন টাইলসের মত চকচক করলেও যখন ভেঙ্গে যাবে তখন ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়বে।


১১. শাশুড়ির অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করবে 

"Respect your mother in law's wisdom and appreciate it."

শাশুড়ির জ্ঞানকে সম্মান করুন এবং তার প্রশংসা করুন। বউর জন্য উচিৎ হল, শাশুড়ির দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা। তার প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা।


১২.স্বামী কোন গৌরব অর্জন করলে সেটা শাশুড়ির অবদান মনে করবে

"If your husband makes an achievement, give credit to mother in law for good upbringing of her"

অর্থাৎ স্বামী কোন গৌরব অর্জন করলে স্ত্রী সেটাকে নিজের কৃতিত্ব বলে মনে করে। সে বলে, ‘আমার স্বামী এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে’! কিন্তু সে ভুলে যায় যে, শাশুড়িই তাকে আদর্শ প্রতিপালনে যোগ্য করে গড়ে তুলেছে। তার সাফল্যের পিছনে শাশুড়ির অবদানই যে সবচে’ বেশি সেটা স্ত্রীকে স্মরণ রাখতে হবে।


১৩. শাশুড়ির আদেশ-উপদেশগুলো মানবে

শাশুড়ির আদেশ-উপদেশগুলো মেনে চলতে সচেষ্ট থাকবে

যথাসম্ভব শাশুড়ির আদেশ-উপদেশগুলো মেনে চলতে সচেষ্ট থাকবে। এতে কোন ত্রুটি করবে না।


১৪. সম্পর্ক ঠিক রাখার প্রতি সদয় থাকবে

শাশুড়ির সাথে যে সম্পর্ক আছে তার প্রতি সদয় থাকবে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবে।


১৫. সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ

লক্ষ্য রাখবে সন্তানরা যেন তাদের দাদা-দাদির সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করে।


১৬. শাশুড়িকে তাচ্ছিল্য করবে না

শাশুড়িরা যেহেতু একটু বয়স্ক হয়। সেহেতু তাদের দৈহিক গড়নে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। কখনো  ওজন বেড়ে দৈহিক গড়ন বেঢঙ হয়ে যেতে পারে। এ কারণে তাকে তাচ্ছিল্য করবে না। বৌ যুবতী আর শাশুড়ি বৃদ্ধা। এ নিয়ে যদি বৌ শাশুড়িকে তাচ্ছিল্য করে তাহলে ঝগড়া বাধবে।


১৭. শ্বশুরবাড়ির নিয়ম-নীতিগুলো গুরুত্ব দিবে

বৌর উচিৎ, শ্বশুরালয়ের যে নিয়ম-নীতি আছে, শরিয়তবিরোধী না হলে সেগুলোকে গুরুত্ব দেবে। সে অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করবে।


১৮. গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পূর্বে শাশুড়িকে জানাবে

কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পূর্বে শাশুড়িকে জানাবে। তার সাথে পরামর্শ করবে। এতে ঝগড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।


১৯. নিয়মিত আপডেট দিবে থাকবে

বিভিন্ন বিষয়ে শাশুড়িকে আপডেট দিতে থাকবে। সন্তান ক্লাসে ভালো নম্বর পেয়েছে বা কোন পুরস্কার  পেয়েছে। এ ধরণের খুশির সংবাদ তাকে জানাতে থাকবে। যাতে সে নিজেকে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভাবতে পারে।


২০. শাশুড়ির সমালোচনা করবে না

অন্যের সামনে শাশুড়ির সমালোচনা করবে না। এটা সম্পর্ক নষ্ট করার ক্ষেত্রে সবচে’ বেশি কার্যকর। আমাদের পৃথিবীর আয়তন খুবই ছোটো। মুহূর্তে কথা ছড়িয়ে পড়ে। একজনের সম্মুখে একটি কথা বলা হলো। সে এটা অন্যের কাছে বলল। সে আবার তৃতীয় আরেকজনকে বলল। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে কথাটা শাশুড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। অধিকাংশ সময় এগুলোই ঝগড়ার কারণ হয়। নারীদের স্বভাব আশ্চর্য প্রকৃতির। কোন কথা দ্রুত প্রচার করার দরকার হলে টিভি রেডিও বা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। সে কাজের দায়িত্ব যদি কোন নারীকে দেওয়া হয় তাহলে বিদ্যুৎগতিতে তা ছড়িয়ে পড়বে। সে অন্যকে এভাবে বলবে, কথাটা আমাকেই বলা হয়েছে। আমি শুধু তোমাকেই বললাম। তুমি কাউকে বলবে না কিন্তু! যে শুনবে সে আবার অন্যজনকে বলবে, দেখো আমাকে বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবু তোমাকে বলছি। তুমি কাউকে বলবে না। এভাবে হতে হতে দেখা যাবে কথাটা আর কারো কাছে গোপন নেই। এক কান দু’কান করে হাজার কানে পৌঁছে গেছে।


২১. স্বামীকে বলবে মাকে সময় দিতে

স্ত্রী যেন আপনা থেকেই স্বামীকে বলে তুমি তোমার মাকে সময় দাও। তোমার আজ সময় আছে। আজ মায়ের কাছে থাকো। এমন কথা কখনই বলবে না, ‘হয় আমাকে গ্রহণ করো না হয় মাকে গ্রহণ করো’। ছোটো ছোটো বিষয়ে স্বামীর কাছে অভিযোগ করবে না।


২২. মাঝে মাঝে শাশুড়িকে দাওয়াত করবে

মাঝে মাঝে শাশুড়িকে দাওয়াত করে মেহমানদারি করবে। এতে মুহব্বত-ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। চিন্তা যদি ইতিবাচক হয় তাহলে শাশুড়িকে মায়ের মতই মনে হবে। আর যদি নেতিবাচক হয় তাহলে শাশুড়িকে প্রতিপক্ষ মনে হবে। শাশুড়িকে ‘দানবী’ বলতেও শোনা যায়।


পুত্রবধূদের বিরুদ্ধে শাশুড়িদের অভিযোগ

যারা শাশুড়ি হয়েছেন এমন মাদের উপর আমেরিকার একটি প্রসিদ্ধ ইউনিভার্সিটিতে জরিপ করা হয়েছিলো। পুত্রবধূদের উপর তাদের কী কী অভিযোগ রয়েছে। কয়েকহাজার নারীদের উপর এই জরিপ চালানো  হয়। যাদের প্রত্যেকে ছিলো উচ্চ শিক্ষিত। বিচক্ষণ ও সফল জীবনের অধিকারিণী। তাদের জবানবন্দিতে কিছু বিস্ময়কর তথ্য ওঠে আসে। 


তাদের অভিযোগুলো ছিলো এ রকম–

১. দ্বিমুখী আচরণ

বউরা ফোন করে বলে, বাসায় এসে বেড়িয়ে যান। কিছুদিন সেখানে থাকার পরে- ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়াতে মেসেজ ও ই-মেইল করে বান্ধবীদের বলে, ‘কী করি বলো তো, আমার ঘরে জলজ্যান্ত একটা দানবী?’ তাদের এ দ্বিমুখী আচরণে আমরা খুব কষ্ট পাই। আরে! নিজেই তো দাওয়াত করেছ। আমরা দাওয়াত কবুল করেছি। এখন কেন বোঝা মনে করছো?


২. ফোন করে পাওয়া যায় না

ফোন করে তাদেরকে পাওয়া যায় না এতে আমরা অনেক কষ্ট পাই। আমরা তো তার স্বামীর মা! আমাদের ফোনকে এভাবে উপেক্ষা করা উচিৎ নয়।


৩. সমালোচনা

আমরা চাই বৌরা যেন অগোচরে আমাদের সমালোচনা থেকে বিরত থাকে। এই সমালোচনাই মানুষকে মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। পরস্পরের মাঝে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ইরশাদ হয়েছে–

 الغيبة أشد من الزنا যিনা গীবত থেকেও মারাত্মক।


৪. প্রতিউত্তর না করে নির্বিকার থাকে

ঝগড়ার প্রতিউত্তর না করে নির্বিকার থাকাও এক প্রকারের ঝগড়া।


৫. বাজে উপহারটা আমাদের জন্য নিয়ে আসে

তারা সবার জন্য দামী দামী উপহার কিনে আর আমাদের জন্য বাজে জিনিসটা নিয়ে আসে যেটা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।


৬. বাচ্চার জন্য দামী কোন উপহার আনলে আপত্তি করে

তার বাচ্চার জন্য দামী কোন উপহার আনলে আপত্তি করে কেন এতো দামী জিনিস কিনেছেন? আমরা আমাদের নাতি-নাতনির জন্য খরচ করছি এতে বাধা দেওয়া উচিৎ না।


৭. I raised a child you are happily married with, give me the credit.

ইংল‍্যান্ড সফরে একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। এক স্থানে বয়ান করছিলাম। বয়ান শেষে এক ব্যক্তি এসে বলল, হযরত আমার একটি উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে আছে। চাকরিও করছে ভালো বেতনে। সে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চায়। 

: ঠিক আছে চলুন। পর্দার আড়াল থেকে যা জানতে চায় জিজ্ঞাসা করে নিতে পারবে। 

পিতা তার মেয়েকে লক্ষ করে বলল, বেটি! তোমার যা জানার ইচ্ছা জেনে নাও। 

সে প্রশ্ন করল, 

: হযরত, ইসলাম পুরুষকে চার বিয়ের অনুমতি দিয়েছে নারীকে কেন দেয়নি?

প্রথমে তাকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম এবং বললাম,

: এতে অনেক হিকমত রয়েছে। 

কিন্তু সে কিছুতেই মানতে রাজি নয়। সে বলল,

: জ্বি না, এ কারণে নয়! বরং পুরুষ আয়-রোজগার করে স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব‍্যবস্থা করে, একারণে। বর্তমানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও উপার্জন করছে। তাই তাদেরকেও চার বিয়ের অনুমতি দেওয়া উচিৎ। আমি এ সকল বিষয়ে পারদর্শী এবং একজন দৃঢ়চেতা নারী! যে কোন বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত যোগ্যতা রাখি! তাহলে চার বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? 

এভাবে সে তার যুক্তি ও কীর্তি শোনাতে লাগল। ভাবলাম, সোজা কথায় কাজ হবে না! তাই বললাম, 

: আচ্ছা, ধরে নিলাম, আপনি চারটি বিয়ে করলেন। বিবাহ যেহেতু চারটা করেছেন তাই শাশুড়িও চারজন হবে! 

শাশুড়ির কথা শুনতেই সে ঘাবড়ে গেল! বলল, 

: হযরত এটা কী বললেন? 

: চার স্বামীর প্রত্যেকের বোন পাঁচটা করে থাকলেও ননদ হবে, অন্তত ২০জন! 

এ কথা শুনে সে আরো ঘাবড়ে গেল। বলল, 

: না না হযরত! বুঝেছি, আর বলতে হবে না। এক বিয়েই ঠিক আছে!

তো বউদের কাছে শাশুড়িরা এমনই এক ভয়ংকর এক বস্তু! তাই অনেকে মজা করে বলে থাকে, আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ, আমার শাশুড়ি আছে!


তবে তাদের সম্পর্কটা মধুরও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের চেষ্টা থাকা জরুরি। বউ যদি শাশুড়িকে শ্রদ্ধা করে আর শাশুড়ি বউকে ছাড় দিয়ে চলে তা হলেই এটা সম্ভব। 


অনেক পরিবারে দেখেছি, শাশুড়ি এতোটাই কঠোর হয় যে, বউকে অনুমতি ছাড়া ফ্রিজটাও খুলতে দেয় না। 


দুবাই অবস্থানরত এক মেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলছিল, শ্বশুরবাড়িতে আমার জন্য ফ্রিজ খোলারও অনুমতি নেই। এটা বাড়াবাড়ি। বউকে পরিবারের একজন সদস্য মনে করতে হবে। 

আর বউ শাশুড়িকে আচরণ উচ্চারণে বুঝাবে যে, আপনিই এ ঘরের রাণী। আমি তো আপনার একজন খাদেমা মাত্র। শাশুড়ি যখন অনুভব করবে যে সেই এ ঘরের রাণী তখন প্রশান্তি পাবে। 


বিয়ের পর প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়িতে বউকে একটু কষ্ট করতে হয়। একজন আরেকজনকে বুঝতে কিছুটা সময় দিতে হয়। কারণ, প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দের বিষয় ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই যে কোন কষ্ট চেপে রাখবে। আচরণ-উচ্চারণে ভারসাম্য বজায় রাখবে। একসাথে থাকতে থাকতে এক সময় ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যাবে। 


শাশুড়ির শাসনে অতিষ্ঠ এক বউ

শাশুড়ির অত‍্যাচার থেকে সে বাঁচতে চায়। তাই একদিন ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল, শাশুড়ি আমার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে, তার থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আমি বাঁচতে চাই না। আমার জন্য কিছু একটা করুন। (মানে কিছু দিন খেয়ে মরে যাই) ডাক্তার ছিলেন একজন বিজ্ঞ লোক। তিনি বললেন,

: আচ্ছা, যে তোমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাকেই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দাও।

মেয়েটি তখন ভাবল,

: তাই তো! শাশুড়িকে মেরে ফেললেই তো এই আপদ থেকে বাঁচা যায়। হতাশার মাঝে সে আশার আলো দেখতে পেল। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে লাগল। মনে তার আনন্দ, চেহারায় হাসির ঝিলিক।

মেয়েটি বলল,

: ঠিকই বলেছেন ডাক্তার সাহেব! তাই হবে।

ডাক্তার তাকে বলল,

: শাশুড়িকে বিষ খাইয়ে মারবে। 

: তুমি তো তাকে প্রতিদিন দুধ পান করাও, তাই না? 

: জ্বি স্যার!

: ঐ দুধে বিষ মিশিয়ে পান করাবে। সে বিষ পান করবে আর মরে যাবে। তুমি বেঁচে যাবে!

মুক্তির আশ্বাসবাণী শুনে মেয়েটি খুব খুশি হল। এবং বলল, 

: তাহলে আর দেরি কেন? 

ডাক্তার বলল, 

: কিন্তু তুমি যদি তাকে এভাবে মেরে ফেলো, তাহলে সবাই  তোমাকে দোষারোপ করবে এবং বলবে তুমিই তাকে হত্যা করেছ। 

: তাহলে উপায়? 

: হ্যাঁ, সেটাই বলছি। আমরা তাকে এমন বিষ প্রয়োগ করবো যেটা ধীরে ধীরে কাজ করবে। বিষের ফলাফল এক বছর পর প্রকাশ পাবে। কিন্তু এই এক বছর তোমাকে তার সাথেই থাকতে হবে।

: এক বছর?! মেয়েটি চিন্তায় পড়ে গেল।

পরক্ষণে ভাবল,

: আচ্ছা, তবুও তো জীবন বাঁচল। এক বছর তো? ব্যাপার না। সে এ কাজে আগ্রহী হয়ে উঠল। 

ডাক্তার বলল, 

: তোমাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যখন থেকে তাকে দুধের সাথে বিষ পান করাতে শুরু করবে তখন থেকেই বাহ্যিকভাবে তার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখবে। হাসিমুখে কথা বলবে। প্রফুল্ল মনে কাজ করবে। যে কোনোভাবে তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করবে। তোমার প্রতি যাতে কারো সন্দেহ না জাগে।

মেয়েটি প্রফুল্ল মনে ঘরে ফিরে গেল। শাশুড়িকে প্রতিদিন দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে দিতে শুরু করল আর ভাবতে লাগল, আর মাত্র কয়েক দিন। এর পরেই শাশুড়ির অত‍্যাচার থেকে বেঁচে যাব। 

এখন সে শান্ত ভদ্র মেয়ে! শাশুড়ির কথায় রাগ করে না। তার সাথে অত্যন্ত মমতা ও শ্রদ্ধার সাথে কথা বলে। হাসিখুশি সময় কাটায়। 

কেউ যাতে বলতে না পারে যে, শাশুড়ির সাথে তার সম্পর্ক ভাল ছিল না।

তায়ালা মানুষের মন এমনভাবেও সৃষ্টি করেছেন। কেউ জোর করেও যদি মুহব্বত-ভালোবাসার সাথে থাকার চেষ্টা করে তাহলে একসময় বাস্তব ভালোবাসাই তৈরি হয়ে যায়। ৯/১০ মাস পর বউ-শাশুড়ির মধ‍্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল। শাশুড়িকে সে এখন নিজের মায়ের মতই ভালোবাসতে শুরু করেছে। হঠাৎ একদিন সে ভাবল– হায়, আর মাত্র দুই মাস বাকি! এরপর তিনি মারা যাবেন! আমি তো তার সাথে এখন চমৎকার সময় পার করছি! আমরা দু'জনে মা-মেয়ের মত থাকছি। তিনি চলে গেলে তো আমার কী হবে?! চিন্তায় সে অস্থির হয়ে পড়ল। সে পূনরায় ডাক্তারের কাছে ছুটে এলো এবং বলল, 

: ডাক্তার সাহেব, আপনি তো আমাকে এমন বিষ দিয়েছিলেন যা ধীর গতিতে কাজ করবে। এই বিষ আমি শাশুড়িকে ১০ থেকে ১১ মাস খাইয়েছি। এখন শুধু শেষ মাসটা বাকি। কিন্তু এখন শাশুড়ির প্রতি আমার মনে ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে। আমি খুবই চিন্তিত। তিনি চলে গেলে আমার কী অবস্থা হবে? 

ডক্তার সাহেব তখন মুচকি হেসে বললেন, 

: দেখুন, বাস্তবতা হল, আমি আপনাকে বিষ বলে যা দিয়েছিলাম তা কোনো বিষ ছিল না বরং চিনির গুড়া ছিল!

আমি বলেছিলাম, এক বছর তার সাথে ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করুন। এভাবে এক বছর থাকলে আপনা থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয়ে যাবে। আপনি তার সাথে একটি বছর ভালোভাবে কাটিয়েছেন, এখন আপনার হৃদয়ে তার প্রতি এমন ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে যে, আপনি তার মৃত্যুর জন্য চিন্তিত, আপনি যান, শাশুড়ির সাথে মিলেমিশে থাকুন এবং সুন্দর সময় পার করুন। আল্লাহ্ তায়ালা তাকে দীর্ঘজীবি করুন। বাস্তবতা এমনই প্রথম প্রথম একটু ধৈর্য ধারতে হয়। যখন একে অপরের সাথে স্বভাবের মিল হয়ে যায় তখন পরস্পর সুন্দর সময় কাটাতে পারে।


সকাল বেলা যখন বাসে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। তখন যদি কেউ এসে সিটে বসতে চাইলে, সবাই বলে ওঠে, জায়গা নেই! জায়গা নেই! কিন্তু সে যখন কোন একটা কোণায় বসে পড়ে, দুই মিনিট পর তার সঙ্গে যে অপরিচিত ভাব ছিল তা কেটে যায়। লোকেরা তার সাথে মজা করে কথা বলতে শুরু করে। তার জন্য হৃদয়ে জায়গা হয়ে যায়।  


লিফটেও এমনটি ঘটে। একসাথে যখন ৮জন লিফটে উঠে পড়ে তখন যদি নতুন কেউ উঠতে চায়, সবাই বলে, জায়গা নেই! জায়গা নেই! কিন্তু কেউ যখন তাকে বলে আচ্ছা, আমি জায়গা করে দিচ্ছি, আপনি আসুন! তখন লোকটি লিফটে উঠে দাঁড়ায়। তো একটু পরেই তার ব্যাপারে সবার ধারণা বদলে যায়। তাকে আর পরপর লাগবে না। মানুষের প্রকৃতি এমনি একটু ধৈর্য ধরে কারো সাথে কিছুদিন অবস্থান করলে তার সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরস্পরের মাঝে সম্পর্কের কারণে পুরো জীবনটাই শান্তি সুখের হয়।


আদর্শ বধূরা এমনই হয়

এক পুত্রবধু যে শাশুড়ির প্রতি খুব খেয়াল রাখত। একদিন সে লক্ষ করল, দুই মাস হয়েছে তার স্বামী মায়ের সাথে দেখা করতে যায়নি। তাই সে তার স্বামীকে এই বলে উদ্বুদ্ধ করল যে, আমরা একসাথে অনেক দিন কাটিয়েছি। সামনে সাপ্তাহিক ছুটি আসছে। এই ছুটিটা যদি আপনি মায়ের সাথে কাটাতেন তাহলে ভালো হত। স্ত্রীর কথায় স্বামীরও খেয়াল হলো, তাই তো, দুই মাস হয়ে গেল মার সাথে দেখা করতে যাওয়া হয়নি! অন্তত একবেলা মায়ের সাথে খাওয়া উচিত! তার বাবা মারা গিয়েছিল। মা একা থাকত। তাই মাকে সময় দেওয়া তার কর্তব্য ছিল। সে তার মাকে ফোন করে বলল, মা আমি তোমাকে দাওয়াত দিতে চাই তোমার সাথে বসে খাব, গল্প করবো।

সন্তানের কথায় মা খুব খুশি হল! তারিখ ঠিক হল। ছেলে যখন মাকে আনতে গেল– দেখল, তার মা সুন্দর ও দামি জামা পরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে। মনে তার আনন্দ। ছেলে আজ তাকে দাওয়াত করেছে। তার সাথে সুন্দর একটি সময় কাটবে। ছেলে মাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেল। সেখানে দুজনের মধ্যে অনেক গল্প হল। ছেলেবেলার গল্পসহ আরো বিভিন্ন গল্প। সময়টা তারা খুব উপভোগ করল। মা ছেলে দুজনেই খুব প্রফুল্ল ছিল। ছেলে মাকে জিজ্ঞেস করল, 

: মা তুমি কি খুশি?

: বাবা তোমাকে পেয়ে আমি আজ অনেক খুশি। তবে আমি তোমার প্রতি আরো একবার খুশি হতে চাই। 

: সেটা কিভাবে? 

: আজ যেভাবে তুমি আমার সাথে খাবার খেয়েছ। একমাস পর আমার সাথে আবার খাবার খাবে তখন আমি খাবারের বিল পরিশোধ করবো। তাহলে আমার জীবন খুশিতে ভরে যাবে। ছেলে রাজি হল। দিন তারিখ ঠিক করা হল। সেখানে বসেই তার মা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে ফোন করে বুকিং করে ফেলল। তারপর ছেলেকে বলল, বাবা আমি আজ অনেক খুশি হয়েছি যে, তুমি আমাকে সময় দিয়েছ। এখন আমি পুরো মাস আগামী দিনটার অপেক্ষায় থাকব। সময়টা আমার আনন্দে কাটবে। 


আল্লাহ তা'আলার কী মহিমা! ওই মহিলা ৫ দিন পর হার্টফেল করে মারা গেল।

দেখুন, মা মারা গেলেন সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায়। ছেলে আমাকে সময় দিয়েছে। আমি একমাস পর আবার তার সাথে খেতে যাব। ছেলের মনেও আনন্দ যে, মা আমার উপর সন্তুষ্ট থেকে চলে গেছেন। বউয়ের মনেও আনন্দ, স্বামীর প্রতি তার মা সন্তুষ্ট ছিল। মানুষের চিন্তার জগতটা যখন স্বচ্ছ ও সুন্দর হয় তখন তার কারণে আশপাশের সবার জীবন-ই সুখী হয়। 


বউদের এই চিন্তা করা উচিৎ যে, সে আমার স্বামী হলেও কারো না কারো সন্তান। মাকেও তার সময় দিতে হবে। যখন বউ শাশুড়ির প্রতি এবং শাশুড়ি বউয়ের প্রতি খেয়াল রাখবে তখন পরস্পরের মাঝে মহব্বত-ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পরিবারের মধ্যে চমৎকার সময় কাটবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সবাইকে সুন্দর জীবন যাপন তৌফিক দান করুন, আমিন।


وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين


  • ⇰ মূল: হযরত মাওলানা জুলফিকার নকশবন্দী দা.বা.
  • ⇰ ভাষান্তর: সাখাওয়াতুল্লাহ

Post a Comment

0 Comments